বিহারীনাথ, বড়ন্তি, গড় পঞ্চকোট, বান্দা, শুশুনিয়া, গঙ্গাজলঘাঁটি ( তিন দিনের জন্য) (জনপ্রতি ৫৭০০/-)

প্রথম দিন

সকালে রওনা, মাঝপথে শক্তিগড়ে প্রাতরাশ। 

মাঝে দুর্গাপুর ব্যারেজ দর্শন।

সকাল দুপুরের মাঝামাঝি পৌঁছনো বিহারীনাথ পাহাড়। ( চারদিকে ছোট ছোট সবুজ পাহাড়ে ঘেরা নির্জন ছবির মত এইএলাকাকে কেউ কেউ ভালবেসে বাংলার আরাকু বলেও ডাকেন)।

মধ্যাহ্ন ভোজন সেরে সামান্য বিশ্রাম। তার পরে ঝরনা দেখতে যাওয়া। বিকেলে নিঝুমপুরে বসে পাখির কলতান শোনা। 

 সন্ধেয় বিহারীনাথ শিব মন্দির দর্শন। সন্ধের দিকে আদিবাসী গ্রামে স্থানীয় মানুষের সান্নিধ্য লাভ। রাতে বিহারীনাথেই থাকার ব্যাবস্থা।

দ্বিতীয় দিন

প্রাতরাশের পরে বরন্তির উদ্দেশে রওনা। বরন্তি মুরাডি জলাধার দেখে সোজা চলে যাওয়া  পাহাড়ের কোলে সবুজ  অরন্যে ঘেরা গড় পঞ্চকোটের উদ্দেশে।

পঞ্চকোট এর রাজবংশের ইতিহাসটি অতি প্রাচীন। প্রায় উনিশ শতক ধরে প্রবাহমান (খ্রিস্টাব্দে ৮০ থেকে শুরু করে ১৯৪০ অবধি) এই রাজকাহিনী জানা যায় লোকমুখে প্রচলিত গল্প গাথা, নাটক, ও অল্পকিছু প্রামাণ্য ইতিহাস গ্রন্থ থেকে। লোকমতে রাজপুতানার ধারানগরীর মহারাজ জগদদেও ৮০খ্রিস্টাব্দে সস্ত্রীক পুরী যাওয়ার সময় বঙ্গ দেশের পশ্চিম সীমায় রমনীয় প্রাকৃতিক পরিবেশ সমৃদ্ধ এক পর্বতের পাদদেশে শিবির  করেন। সেখানে তার সন্তানসম্ভবা স্ত্রী একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দিলে সেটি মৃত বোধ করে তারা শিশুটিকে সেখানেই ফেলে চলে যায়। অলৌকিক ভাবে প্রাণ পাওয়া সেই শিশুটি স্থানীয় সর্দারদের ঘরে লালিত হয়। শিখর ভূমে জন্ম নিদর্শন স্বরুপ তার নামকরণ হয় দামোদরশেখর।তিনিই হলেন শিখর ভূম বা পঞ্চকোট রাজবংশর প্রথম রাজাধিরাজ। তার পর মহারানা শ্রী জ্যোতিপ্রকাশ সিংদেও বাহাদুর অবধি দীর্ঘ উনিশ শতক ধরে প্রায় ঊনষাট রাজপুরুষ নিরবচ্ছিন্ন ভাবে এই রাজবংশ শাসন করেছেন। বহু গল্পগাথা, উত্থান পতন এর সাক্ষী এই গড় পঞ্চকোট। একসময় তা পশ্চিম রাঢ় বাংলা ও ঝাড়খন্ড এর বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ছিল।অত্যন্ত বর্ধিষ্ণু, প্রজাবৎসল, সুশাসক এই রাজাদের রাজধানী বিভিন্ন জায়গায় স্থানান্তরিত হতে হতে শেষে কাশিপুর এ তৈরি হয় সুউচ্চ রাজপ্রাসাদ। এই বংশের রাজাদের দান ধ্যান এর খ্যাতি ছিল। বিখ্যাত মা কল্যানেশ্বরী মন্দির, রাজ রাজেশ্বরী মন্দির, রঘুনাথ জিউ এর মন্দির প্রতিষ্ঠা এই সবই তাদের কীর্তি। কাশিপুর, পুরুলিয়া, মুরাড়ি, চাপরা,ডিসেরগর প্রভৃতি অঞ্চলে বহু অবৈতনিক বিদ্যালয়,দাতব্য হাসপাতাল, টোল, জলাশয় ইত্যাদি তৈরি করেন প্রজাদের সুবিধার্থে। বঙ্গদেশে তখন প্রায়ই বিদেশি আক্রমণের পাশাপাশি দস্যু, বর্গী, মোগল আক্রমণ লেগেই থাকতো কিন্তু এই রাজ্যের প্রবল পরাক্রমশালী রাজারা দীর্ঘকাল স্বাধীন সাম্রাজ্যের অধিস্বর ছিলেন।  এই পঞ্চকোট পর্বতের দুর্গম প্রাচীর সেই কথা বলে। শোনা যায় বর্গী আক্রমণে প্রবল ক্ষতিগ্রস্থ হয় এই গড়, তখন এখান থেকে রাজধানী সরিয়ে নিতে বাধ্য হন তাঁরা। তারই ভগ্নাবশেষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পাহাড়ের কোলে।  

সবুজ পাহাড়ের কোলে ছড়িয়ে থাকা গড় পঞ্চকোট দেখে সেখান থেকে আমাদের গন্তব্য হবে পাঞ্চেত জলাধার। দামোদরের উপরে সেই জলাধারের অপূর্ব সৌন্দর্য উপভোগ করে সটান রঘুনাথপুর।

রঘুনাথপুরে মধ্যাহ্ন ভোজন সেরে রওনা বান্দার উদ্দেশে। পলাশ বনের মাঝে নির্জন শান্ত পরিবেশে রয়েছে এক জৈন মন্দির। পাশেই ছোট্ট জলাধার। অপূর্ব পরিবেশ। সেখান থেকে আমরা যাব জয়চন্ডী পাহাড় । 

 সত্যজিৎ রায়ের হীরক রাজার দেশে ছবির শুটিং হয়েছিল জয়চন্ডী পাহাড়ে। পাহাড়ের উপরে রয়েছে জয়চণ্ডী মায়ের মন্দির। জয়চণ্ডী পাহাড়ের অদ্ভুত সুন্দর প্রাকৃতিক শোভা দর্শনের পর ফিরে যাওয়া হবে বিহারীনাথে। রাত্রিবাস বিহারীনাথেই।

তৃতীয় দিন

প্রাতরাশ সেরে গন্তব্য  শুশুনিয়া পাহাড়। শুশুনিয়া পাহাড়ের মূল অংশ দেখার পর আমরা নিয়ে যাব অপর পাশে যেখানে প্রাচীন শিলালিপি এবং ঝরনা রয়েছে। নির্জন, সবুজে মোড়া সেই এলাকা এক কথায় অবর্ণনীয় সুন্দর।

সেখান থেকে আমাদের গন্তব্য হবে গাংদুয়া  জলাধার।

গাংদুয়া দেখে এবার কোড়ো পাহাড় এবং তপোবনের  উদ্দেশে রওনা। ছায়াসুনিবিড়, শান্তির নীড় সেই তপোবন আশ্রম এবং কোড়ো পাহাড় দেখে গঙ্গাজল ঘাঁটিতে মধ্যাহ্ন ভোজন।

 বিকেলে কলকাতার উদ্দেশে রওনা। পথে শক্তিগড়ে সন্ধের জলখাবার।

………………………………..

কলকাতা থেকে কলকাতা গোটা সফর গাড়িতে 

খরচ জনসংখ্যা এবং গাড়ির ওপরে নির্ভরশীল, আলোচনা সাপেক্ষ।

যোগাযোগ – 9434147524, 9830185464

বিদ্রঃ

  • দুর্যোগ বা দুর্ঘটনার কারনে সফর সূচির পরিবর্তন হতে পারে।
  • সফরের জনসংখ্যা বাড়লে বা কমলে মূল্যের তারতম্য হতে পারে।